ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

ঈদগড়-ঈদগাঁও সড়কে থেমে নেই কাঠ পাচার

imagesমোঃ রেজাউল করিম, ঈদগাঁও, কক্সবাজার ::

কক্সবাজার রামুর ঈদগড়-ঈদগাঁও-বাইশারী সড়ক দিয়ে প্রতিদিন অবাধে পাচার হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সরকারী কাঠ। স্থানীয় বনবিটের অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারীদের যোগসাজশে প্রতি রাতেই পাচার হয় এসব কাঠ। কাঠ পাচারে প্রতিরাতে অবৈধ লেনদেন হয় হাজার হাজার টাকা। অভিযোগ উঠেছে মাসোহারা পেয়ে নিরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে রামু থানা পুলিশ ও ঈদগড় পুলিশ ক্যাম্প। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, পুলিশ, বনবিভাগ এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ত্রিপক্ষীয় যোগসাজশে ব্যাপক কাঠ পাচার হয় উল্লেখিত সড়ক দিয়ে। পাচারের জন্য অবাধে বৃক্ষ নিধনের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নিয়েও দেখা দিয়েছে শংকা। বিগত দিনে চোরাই কাঠবোঝাই গাড়ী উল্টে অনেকেই নিহত হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যে প্রকাশ, কিছুদিন আগে ঈদগড় বনবিটের বনপ্রহরী মতিন, তপন ও মালি রেজাউল করিম দায়িত্বকালে ট্রাক, ড্যাম্পারসহ চাঁন্দের গাড়ী জীপ ভর্তি ব্যাপক কাঠ পাচার হয়। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা তথ্য জানতে চাইলে তারা বিট অফিসারদের নিয়ন্ত্রনে সমস্ত কাঠ পাচার হয় বলে এ প্রতিনিধিকে জানান। অন্যদিকে কাঠ পাচারে লিপ্ত ছগিরাকাটা এলাকার ব্যবসায়ী আবদুর রহিম সাংবাদিকদের নিকট কোন ধরণের তথ্য দিতে নারাজ। বর্তমানে প্রায় রাতেই তার নেতৃত্বে ড্যাম্পার ও জীপগাড়ী যোগে গামারী, গর্জন গাছসহ আরো নানা প্রজাতির বনাঞ্চলের কাঠ নিয়মিত পাচার হচ্ছে। জানা যায়, স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও যুবলীগ নেতাদের এবং গুটি কয়েক সংবাদকর্মীদেরকে ম্যানেজ করে এ কাঠ পাচার ব্যবসা দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছে। এ কাঠ পাচার রোধ করার জন্য কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের অধীনস্থ রয়েছে বাইশারী বনবিট, তুলাতুলি বনবিট, ঈদগড় বনবিট, ঈদগড় রেঞ্জ, ভোমরিয়াঘোনা বনবিট ও ভোমরিয়াঘোনা রেঞ্জ অফিস। উল্লেখিত অফিসগুলোতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এতদঞ্চলের বনজ সম্পদ উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সংরক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকলেও তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, রেঞ্জ ও বনবিটের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা এতদঞ্চলের বনজ সম্পদ উন্নয়নের পরিবর্তে নিধনযজ্ঞ, সম্প্রসারণের পরিবর্তে সংকোচন এবং সংরক্ষণের পরিবর্তে নিধন মহোৎসবে নেমে পড়েছে। পাশাপাশি চেক স্টেশনগুলো পাহারাদারির পরিবর্তে কাঠ পাচারের মহোৎসবে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। এতে করে ঈদগড়-বাইশারীর বিশাল বনভূমি দিন দিন বিরাণ ভূমিতে পরিণত হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্যে প্রকাশ, বনবিটগুলোর আওতাধীন এলাকায় সরকারী অর্থে ও প্রাকৃতিকভাবে সৃজনকৃত সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে পাচারকারীরা দিনে ও রাতে সেগুন, চাপালিশ, গামারী, কড়ই, গর্জন, আকাশমনি, জামগাছসহ নানা প্রজাতির ছোট-বড় গাছ কেটে সরকারী বাগান সংলগ্ন নিরাপদ জায়গায় স্তুপ করে রাখে। সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এসব কাঠ গাড়ীভর্তি করে ঈদগড়-ঈদগাঁও-বাইশারী সড়ক দিয়ে রাতভর পাচার করে ঈদগাঁও ও জেলার বিভিন্ন ইটভাটা এবং স’মিলে। কাঠ পাচারকারীদের মধ্যে মাঝে-মধ্যে দন্ধ সৃষ্টি হলে তখন কাঠভর্তি ২/১টি ট্রাক, জীপ লোকদেখানো বনবিভাগের কর্মকর্তারা আটক করে। বর্তমানে বনবিট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রক্ষকের পরিবর্তে ভক্ষকের ভূমিকায় অবর্তীণ হয়েছে। শুধু এতেই শেষ নয়, বনবিভাগের কোন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা যদি কোনভাবেই খবর পেয়ে বিশেষ অভিযানে নামে তখন অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গাছপাচারকারীদের কাছে সে খবর দ্রুত পৌঁছে দেয়। এতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অভিযান নিষ্ফল হয়। বিশেষ করে রাত ১০টা পেরুলেই শুরু হয় পাচার মিশন। এর পর পথে পথে চলে চাঁদাবাজি। চাঁদা আদায়ে এলাকা ভিত্তিক নিয়োজিত রয়েছে আদায়কারী সিন্ডিকেট। সম্প্রতি ছগিরাকাটা এলাকার ব্যবসায়ী আবদুর রহিমের নেতৃত্বে বেপরোয়া কাঠপাচারের বিষয়টি বিভাগীয় বনকর্মকর্তা শাহ-ই-আলমের নিকট অভিযোগের সাথে জানানো হলে তার বিরুদ্ধে অচিরেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা শাহ-ই-আলম জানান। ঈদগড় বিট কর্মকর্তা শামসুল আলমের নিকট জানতে চাইলে তিনি জঙ্গলে ব্যস্ত রয়েছেন বলে জানান এবং কাঠ পাচারের বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, বন ধ্বংসকারী ছগিরাকাটা এলাকার ব্যবসায়ী আবদুর রহিমের প্রতি স্থানীয় বনবিভাগের লোকজন দিনের পর দিন কেন দুর্বল হয়ে পড়ছে এ প্রশ্ন এলাকার হাজারো জনতার মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে।

পাঠকের মতামত: